মোঃ হেমায়েত হোসেন খান,মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ-মাদারীপুর ৩ আসনের চার বারের সংসদ সদস্য সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আলহাজ্ব সৈয়দ আবুল হোসেনের শেষ ইচ্ছা ছিল তার জন্মভূমি ডাসারে নিজের তৈরি করা সমাধিতে দাফন করা হবে। কিন্তু তার স্ত্রী সন্তানেরা শেষ ইচ্ছা টুকু পূরণ হতে দিলো না। সৈয়দ আবুল হোসেনের শেষ দাফন সম্পন্ন হলো শশুর বাড়ি সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে।
অনেক আগেই সৈয়দ আবুল হোসেন চিন থেকে তার দাফন সামগ্রী এনেছিলেন তার শেষ দাফন সম্পন্ন করার জন্য কিন্তু তার মৃত্যুর পরে সেই আশা পূরণ করতে দিলেন না তার স্ত্রী খাজা নার্গিস ও মেয়ে।গত শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বাদ জুম্মার নামাজ শেষে তার জন্মস্থান ডাসারে তার নিজের তৈরি করা কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করার ওসিয়াত করছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন। তার সেই ওসিয়াত ভুলে গিয়ে তার শেষ বিদায়ের দাফন করা হয়,সিরাজগঞ্জের হযরত খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রহ.) এর দরবার শরীফের মাজারে।
এবিষয়ে দুঃখ ভরামন নিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে আলহাজ্ব সৈয়দ আবুল হোসেনের ছোট ভাই ডা: আবুল হাসান বলেন,আমি ডাসারে এসে ভাবীকে ফোন করে বলেছি মেঝো ভাই এখানে তার নিজের কবর তৈরি করে তার উপরে স্থাপনা তৈরি করে রেখে গেছেন।
আমি ভাবীকে সেগুলোর ছবি তুলে পাঠিয়েছি। ভেবে ছিলাম এগুলো দেখলে ভাবীর মন নরম হবে,মেঝো ভাইয়ের মরাদেহ ডাসারে নিয়ে আসবেন এবং এখানেই দাফন করতে তিনি রাজি হবেন।
তিনি আরো বলেন,আমি আমার ভাইয়ের প্রথম জানাজা ঢাকার গুলশানের আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে,পরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দ্বিতীয় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। আমি সেখানে ভাইয়ের জানাজার নামাজ পরি নাই,আমরা মনে করেছিলাম ডাসারে এসে মাদারীপুর ৩ আসনের লক্ষ লক্ষ মানুষের সঙ্গে ভাইয়ের শেষ জানাজার নামাজ আদায় করে ভাই কে শেষ বিদায় জানাবো তাতো আর হলো না।
স্থানীয় স্বজনরা জানান সৈয়দ আবুল হোসেন সিরাজগঞ্জ এনায়েতপুরীর হযরত খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রহ.) এর দরবার শরীফের বর্তমান সাজ্জাদানশীন পীর খাজা কামাল উদ্দিন নুহু মিয়ার জামাতা। আমরা শুনেছি এনায়েতপুর গ্রামে তার নিজস্ব একটি বাড়িও রয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে সৈয়দ আবুল হোসেনের মরদহ ডাসারে আনার কথা থাকলেও ডাসারে না এনে,হেলিকপ্টারে করে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে সিরাজগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়েছে,সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয়েছে এনায়েতপুর দরবার শরীফ প্রাঙ্গণে।
জুমার নামাজের পর ২টার দিকে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে সৈয়দ আবুল হোসেনকে দরবার শরীফ প্রাঙ্গণেই কবর দেওয়া হয়।
এসময় ডাসারে সৈয়দ আবুল হোসেনের জন্মভূমি মাদারীপুর ৩ কালকিনি,ডাসারের আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী ও সাধারন জনগন লক্ষ লক্ষ মানুষ উপজেলা চত্বর সহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাদারীপুর ৩ আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা ড, আবদুস সোবহান গোলাপ, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপিকা তাহমিনা বেগম, মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, সাধারন সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ও পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল,কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক, মাদারীপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মীর মামুন অর রশিদ,কালকিনি পৌর মেয়র এস এম হানিফ, সাবেক মেয়র এনায়েত হোসেন হাওলাদার,সহ লক্ষাধিক জনতার উপস্থিতি ছিলো।
সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯৫১ সালে মাদারীপুর জেলার ডাসারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পেশায় একজন শিক্ষা অনুরাগী,রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী ছিলেন।
সৈয়দ আবুল হোসেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে ১৯৯১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আবুল হোসেন ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন।এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এবিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, আমি এসেছি সকল মুসুল্লিদের মতো জানাজা দিতে,ডাসার, কালকিনি উপজেলার মানুষ সৈয়দ আবুল হোসেন সাহেবকে যে ভাবে ভালোবাসা দিয়েছে, আমি ও একজন মানুষ হিসেবে মাদারীপুরের সন্তান হিসেবে চেষ্টা করবো ডাসারের মানুষের পাশে ও তার পরিবারের মানুষের পাশে, আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের পাশে নিয়ে এক সাথে থাকবো,আমি তার বিদায়ী আত্বার মাকফেত কামনা করছি।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর)বেলা আড়াইটার দিকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাহাউদ্দিন নাসিম আরো বলেন,(২৮অক্টবার) বিএনপির নেতা-কর্মীরা যেখানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করবে, সেখানেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের বাধা দিয়ে প্রতিহত করবে বলেও দাবী করেন তিনি।
এছাড়াও বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ২৮ অক্টোবর ঢাকার বায়তুল মোকারমের দক্ষিন গেটে আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করবে। যেখানে সারাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী আসতে হবে না। ঢাকায় যারা আছে, তারাই শান্তি সমাবেশে যোগ দিবে। তবে সারাদেশের নেতা-কর্মীদের বলা হয়েছে, যেখানেই বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করবে, সেখানেই তাদের বাধা দিয়ে প্রতিহত করা হবে। ঢাকার ভিতরে কোন সন্ত্রাসীদের জায়গা নেই। প্রয়োজনে আওয়ামীলীগের কর্মীরা জীবন দিয়ে হলেও বিএনপিদের বাঁধা দেয়া হবে।
তিনি এসময় বিএনপির সমাবেশের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন। সেই সাথে আগামীকালের মহা সমাবেশকে নিয়ে আওয়ামীলীগ শঙ্কিত নয় বলে দাবীও করেন।
সবশেষে বাহাউদ্দিন নাছিম মাদারীপুর ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আবুল হোসেনের পরিবারবর্গের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত