মোঃ মোমিন ইসলাম সরকার দেবীগঞ্জ পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ-
রত্না মিমির নতুন বন্ধু। মিমি কলেজে ভর্তি হয়েছে ১১ ক্লাসে পড়ে। রত্না বিবাহিতা। মিমির থেকে একটু বয়সে বড়। এক কোচিং এ পড়ে। বৌ দেখে সবাই একটু বেশি কৌতূহলী রত্নার প্রতি।
রত্না খুব সুন্দর করে কথা বলে। দেখতে মোটামুটি। খুব সুন্দর নাচে। রত্নার সাথে মিমির বন্ধুত্ব হয়েছে একটু অন্যভাবে।
মিমি যে স্যারএর কাছে পড়ত সেই স্যার এর বৌ রত্না। মিমি সবে ১১ ক্লাসে উঠেছে। সংসারের মারপ্যাঁচ মাথায় নেই তেমন।
স্যার মিমির সাথে রত্নার পরিচয় করিয়ে দেয়। আর সেখান থেকে তাদের বন্ধুত্ব শুরু। কবে স্যার এর বিয়ে হল সেসব খবর মিমির অজানা।
রত্না প্রায় আসে মিমিদের বাড়ি। মিমির মা ও খুব পছন্দ করে রত্নাকে। বাচ্চা একটা মেয়ে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে গেছে মিমির মা একটু অবাক হয়।
ধীরে ধীরে রত্নার সবার সাথে বন্ধুত্ব গাঢ় হতে থাকে। রত্নার বাড়িতেও বান্ধবীরা যায়। খুব সুন্দর করে সাজানো একটা ঘর। ভাড়া বাড়িতে থাকে রত্না আর তার স্বামী মনীষ। মনীষ আসার আগে রত্না সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
একদিন মিমি খেয়াল করে রত্নার হাতে কেমন যেন পোড়া দাগ। মিমি জানতে চায় কিন্তু কিছু বলে না রত্না। অন্য কথা দিয়ে ঘুরিয়ে দেয়। রত্না কোনদিন তার বাবা মায়ের কথা বলে না। যায় ও না বাপের বাড়ি। বললে বলে ওনারা অনেক দূরে থাকেন তাই যাওয়া হয় না।
পড়াশুনায় খুব আগ্রহ রত্নার। মাঝে মাঝেই সবাই খেয়াল করে রত্নার গায়ে চাকা চাকা দাগ। কেমন যেন রক্ত জমে থাকার মত। বললে নানা বাহানা দেখায়।
বন্ধুরা অবাক হয় অন্যরা নানা আলোচনা করতে থাকে। রত্না ওসবে পাত্তা দেয় না।
মিমির সাথে খুব বন্ধুত্ব। একদিন মিমিকে রত্না বলে সেই রাতের কথা। বিয়ে করে মনীষ তাকে। মনীষ বয়সে বড় আর রত্না ১৭/১৮ হবে। সদ্য কৈশোরে প্রাপ্তা। গড়নে লালিত্য মাখা। বৌভাতের রাতে অন্তরঙ্গতার মুহূর্তে মনীষ তাকে প্রচন্ড জোরে তার উরুতে মারে। ব্যাথায় অস্থির হয়ে কান্না করতে থাকে রত্না। মনীষ তার বর্বরতা পুরুষতা ফলায় রত্নার উপর। রক্তে ভেসে যায় বিছানা। চারদেয়ালের মধ্যে বন্দি থাকে সেই রাতের অসহ্য কষ্টের কথা। তারপর থেকে প্রতি রাতেই চলত নির্মাণ অত্যাচার।
কোনদিন সিগেরেটের ছ্যাঁকা কোনদিন চড়। ছোট্ট মেয়ে রত্না ভয়ে আরস্ট থাকত স্বামীর ব্যবহারে। কোথাও যাবার জায়গা নেই তার। মিমি বলে বাবা মায়ের কাছে যাও। রত্না বলে মা বাবা সে তো নেই আমার, আমি অনাথ। অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছি। নিজের পায়ে দাঁড়াবার জন্য আশ্রম থেকে পড়াশুনা, নাচ শিখিয়েছে। কত কষ্ট করে বড় হয়েছি। তারপর একদিন গণবিবাহ হয়। সেই বিবাহে আশ্রমের ১০ টি মেয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
আর মনীষ নাম কেনার জন্য রত্নাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর মাঝে মাঝে আশ্রমে গিয়ে দেখা করে আসতে হত। নিয়ম তাই কিন্তু কেই বা খবর রাখে অত্যাচারের। রেখেই বা কি হবে। আবার হয়ত অনাথ আশ্রমেই থাকতে হবে।
অত্যাচারের মাত্রা ক্রমশ বাড়তেই থাকে। রত্না সবাইকে মানে বন্ধুদের জানাতে থাকে মনের কথা। মনীষ বুঝতে পারে সন্দেহ করে। রত্না যদি সব ফাঁস করে দেয়। একদিন কাউকে না জানিয়েই মনীষ রত্নাকে নিয়ে কোথায় চলে যায়। কেউ খোঁজ পায় না। কত বছর হয়ে গেল রত্নার খোঁজ আর মিমি পায় নি। মাঝে মাঝে মনে পড়ে খুব কিন্তু হারিয়ে গেছে রত্না। পরিণতি কি হয়েছে তাও অজানা।