মোঃ হেমায়েত হোসেন খান,মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-১ আসন শিবচরে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন।
মাদারীপুর-২ আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন চারজন। তারা হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম,কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজী,বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। মাদারীপুর-৩ আসনে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৫ জন
তারা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য ড.আবদুস সোবহান গোলাপ,সাবেক সংসদ সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর গোলাম ফারুক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন এবং সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের ছোট ভাই সৈয়দ আবুল হাসান।
এদিকে, আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর-২ (রাজৈর সদর একাংশ) আসনে টানা ৫ বার সংসদ সদস্য হয়েছেন দলের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান। ওই আসনে প্রথম বারের মতো দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। একই সাথে মাদারীপুর-৩ (কালকিনি-ডাসার-সদর একাংশ) আসনের জন্যও নাছিমের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে দলের মধ্যে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা।
দলীয় সূত্র জানায়, গত সোমবার আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, সাংগঠনিক সম্পাদক পাভেলুর রহমান শফিক খান কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অধ্যাপিকা তাহমিনা বেগম সাধারন সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীনসহ জেলা আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী উৎসব মুখর পরিবেশে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে বলেন, আমরা আশাবাদী বাহাউদ্দিন নাছিম দলীয় মনোনয়ন পাবেন। এ কারণে আমরা সবাই একজোট হয়ে তার জন্য ফরম সংগ্রহ করেছি। মাদারীপুর-২ আসনে পরিবর্তন, আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের দাবি। সাধারণ জনগণ ও দলীয় নেতা-কর্মীরা এখন আর শাজাহান খানকে চান না। তারা পরিবর্তন চান।
অন্যদিকে, সোমবার অনুসারীদের নিয়ে মাদারীপুর-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শাজাহান খান। এবিষয়ে শাজাহান খানের মুখপাত্র ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন সেলিম বলেন, মাদারীপুর-২ আসনে শাজাহান খানই দলীয় মনোনয়ন পাবেন, এটা আমরা নিশ্চিত। রাতে আমাদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও গঠন করা হয়ে গেছে।
মাদারীপুর ৩ আসনেও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন নাছিম। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বাহাউদ্দিন নাছিম। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.আবদুস সোবহান গোলাপ।তিনি ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। কিন্তু স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এ আসনে বাহাউদ্দিন নাছিমের পক্ষে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রায় সবার সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন সংসদ সদস্য ড.আবদুস সোবহান গোলাপ। ৫ নভেম্বর সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগমের নেতৃত্বে উপজেলার নেতা-কর্মীরা ঢাকায় গিয়ে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দেখা করে ড.আবদুস সোবহান গোলাপ এর বিরুদ্ধে ৭০ পাতার একটি বইয়ে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। ওই সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মাদারীপুর ৩ আসনে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানান। এ জন্য বাহাউদ্দিন নাছিমের পক্ষে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এনিয়ে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাহাউদ্দিন নাছিমের বাড়ি সদরে হওয়ায় কয়েক বছর ধরে সদর ও রাজৈর উপজেলার আওয়ামী রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত তিনি। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা-সমাবেশে দীর্ঘদিন ধরে শাজাহান খানের পরিবর্তে বাহাউদ্দিন নাছিমকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও শাজাহান খানের তুলনায় বাহাউদ্দিন নাছিমের আধিপত্য অনেক বেশি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে বড় অংশটি নাছিমের অনুসারী। বিরোধ থাকায় সদর উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পাল্টাপাল্টি কমিটিও আছে। এরপরও বাহাউদ্দিন নাছিম মাদারীপুর-২ আসনে মনোনয়ন না পেলে মাদারীপুর-৩ আসনে মনোনয়ন পাবেন বলে প্রত্যাশা করেন নেতা-কর্মীরা।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সমন্বয়ে তারা মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে নূর-ই-আলম চৌধুরী এবং মাদারীপুর-২ ও ৩ আসনে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নাম এককভাবে রেজল্যুশন করে প্রস্তাব করেছেন। এখানে অন্য যারা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, তারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে করেছেন। তৃণমূলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ মনোনয়ন পেলে রাজনীতির মেরুকরণে ভোটার হিসাব পরিবর্তন হতে পারে। বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যায়। এমনকি দলে বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন তিনি।