মোঃ হেমায়েত হোসেন খান
নিজস্ব প্রতিবেদক
সড়ক দুর্ঘটনায় হাসান সরদারের মেরুদন্ড ভেঙে গেছে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না, এমনকি ৪ বছর ধরে হাঁটতেও পারছেন না ৩০বছর বয়সী হাসান সরদার।
এই কারণে হারিয়েছেন গার্মেন্টন্সের চাকুরীও। অন্যের সহযোগিতায় করতে হয় চলাফেরা। তবুও থেমেনেই তার জীবনযাত্রা। ভোর হলেই প্রতিদিন মা হামিদা বেগম তার বড়ছেলে হাসানকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে জামাকাপড় পড়িয়ে ব্যাবসার কাজে বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করে দেন। পরে শুরু হয় হাসানের নিত্যদিনের কার্যক্রম। জীবনের সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন হাসান। তাই আজ জীবন যুদ্ধে জয়ী সে।
জানা যায়, ফুফাতো ভাইয়ের সাথে ঘুরতে গিয়ে ট্রাক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় হাসান। দেশে চকিৎিসা করিয়ে ৮ লাখ টাকা দেনা হাসানের পরিবার। ভিটেমাটিও বন্ধক রাখা ব্যাংকের কাছে। তবুও থেমে নেই অসহায় মানুষটির পথচলা। বড় ছেলে হওয়ায় সংসারের হাল ধরতে প্রতিদিন সকালেই বেড়িয়ে পড়েন হুইল চেয়ার নিয়ে। ভিক্ষাবৃত্তি না করে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে হাটবাজার ও স্কুলকলেজের সামনে বিক্রি করেন চানাচুর, বাদাম, চিপস, আঁচারসহ শিশুদের হরেক রকমের খাবার। ৪ বছর ধরে হাসানের জীবনের গল্প চলছে এভাবেই।
মাদারীপুররে ডাসার উপজলোর কাজীবাকাই ইউনিয়নের পশ্চিম মাইজপাড়া গ্রামে বসবাসরত অসহায় হাসানের পরিবারের। সংসারে মা-বাবা, ছোট এক ভাই ও দুই বোন আছে হাসানের। বাবা আব্দুল গনি সরদার তিনিও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় ভাড়ী কাজও করতে পারেন না। মা হামিদা বেগম শারিরিকভাবে অসুস্থ থাকায় বাড়ির বাইরে বের হন না তেমন।
হাসানের সড়ক দুর্ঘটনার পর বন্ধ হয়ে যায় ছোটভাই হাদিস আহম্মেদের পড়ালেখা। এইচ.এস.সি পাস করা হাদিসের অপেক্ষা এখন একটি চাকুরী। তাও জুটছে না কপালে। হাসানকে বিদেশে চিকিৎসা করানো গেলে আবারো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে সে। এজন্য প্রয়োজন ৩০-৩৫ লাখ টাকা। এতো টাকার জোগান দেয়া অসহায় পরিবারের জন্য সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তার পরিবার। সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চান হাসানের পরিবার।
ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় না গিয়ে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা হাসানের এমন কর্মকান্ডে খুশি স্থানীয়রা। তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই।