1. admin@protidinercrime.com : admin :
  2. protidinercrime@gmail.com : প্রতিদিনের ক্রাইম ডেস্ক : প্রতিদিনের ক্রাইম ডেস্ক
পঁচাশি বছরে দশ হাজার মাকে ধাত্রী সেবা দিয়েছেন লালমন বিবি - Protidiner Crime - প্রতিদিনের ক্রাইম
১৬ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| গ্রীষ্মকাল| শুক্রবার| সকাল ৬:৫৩|
সংবাদ শিরোনামঃ
আগৈলঝাড়ায় কলেজ ছাত্রীর শ্লী’লতাহানি,লজ্জায় আ’ত্ম’হ’ত্যার চেষ্টা আগৈলঝাড়ায় হিজড়া দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৪ জন  গৌরনদীতে বায়োগ্যাস প্রযুক্তি বিষয়ক পাঁচ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন মাদারীপুর সদর হাসপাতালে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে দুদকের অভিযান মাদারীপুরে তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত গৌরনদীতে  SIMCBP মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির বাস্তবায়ন নির্দেশিকা বিষয়ক প্রশিক্ষণ  আগৈলঝাড়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আন্তর্জাতিক নার্স দিবস পালিত  গৌরনদী এসিল্যান্ড ভূমি অফিসে ঘুষ লেনদেনের ভিডিও ভাইরাল অভিযুক্ত কর্মচারী বদলি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে উজিরপুরের মৃৎশিল্প জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে গৌরনদীতে শিশুদের চিত্রাংকন, আবৃতি ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত।

পঁচাশি বছরে দশ হাজার মাকে ধাত্রী সেবা দিয়েছেন লালমন বিবি

প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট সময় : সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৩৪২ বার পড়া হয়েছে

মোঃ হেমায়েত হোসেন খান,নিউজ ডেস্ক মাদারীপুরঃ-লালমন বিবি।বয়স ৮৫ বছর।কোন স্হান থেকে খবর আসলে ছুটে চলেন এই বৃদ্ধ বয়সে নদীর এপার থেকে ওপারে।দিয়ে থাকেন ধাত্রী সেবা।আর সেই সেবাই এখন তার নেশা।বলছি মাদারীপুর সদর উপজেলা ঝাউদি ইউনিয়নের হোগলপাতিয়া গ্রামের ৭নং ওয়ার্ডের মৃত্যু আবদুল মালেক হাওলাদারের স্ত্রী লালমন বিবির কথা।

মাত্র ১৫ বছর বয়সেই ২৫ বছরের যুবক আবদুল মালেক হাওলাদারের সাথে বিয়ে হয় হোগলপাতিয়ার গ্রামের লালামনবিবির।এদিকে হাতের মেহেদী রং শেষ হতে না হতেই তিন দিনের মাথায় যেতে হয়েছে মাদ্রা এলাকায় সালেহা বেগমের বাচ্চা প্রসব বা ধাত্রী কাজে।ছিল না তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জ্ঞান।১৯৫৩ সালের ডিসেম্বর মাসের দিকে মাদারীপুর টিবি ক্লিনিক এখানের ডাক্তারা এক দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে শিখিয়েছিলেন কিভাবে বাচ্চা ডেলিভারি করলে কোন সমস্যা হবে না।আর সেই একদিনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৭৫ বছর ধরে চলছে তার এই ধাত্রী সেবার কাজ। এ পর্যন্ত ৮-১০ হাজারের বেশি মাকে এ সেবা দিয়েছেন লালমন বিবি।

লালমন বিবির দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। বড় ছেলে লাল মিয়া হাওলাদার জন্মের কয়েক বছর পরেই মারা যান।এখন তার এক ছেলে চানমিয়া হাওলাদার ও তিন মেয়ে নেহার বেগম, রিনা বেগম, ফাতেমা খানম এ নিয়ে তার সংসার। এদিকে তিন মেয়েকে বিয়েও দিয়েছে তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে স্হানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৩৮ সালে হাওলাদার পরিবারে লালমন বিবির জন্ম হয়।বাবা দাদায় মৌলভি( আলেম)থাকায় তাদের কাছ থেকে পেয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা।আয়ত্ত করেছেন কুরআন শিক্ষা। বেড়ে ওঠার ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয় আব্দুল হাওলাদারের সাথে।

তিনি ছোটবেলায় থেকেই ছিলেন পরোপকারী। যেখানে মানুষের বিপদের কথা শুনতেন সেখানেই ছুটে চলতেন তিনি। আর সেই উপকারের দিক ধরে রেখে চলছেন ১৫ বছর পর থেকে ধাত্রী কাজ করে। তিনি ধাত্রী কাজের পাশাপাশি কোন নারী মারা গেলে করান গোসল। বিনা পারিশ্রমিকে নিজের অর্থ ব্যয় করে ছুটে চলে নদীর এপার থেকে ওপারে এবং ইউনিয়ন থেকে আরেক ইউনিয়নে। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। তিনি নারীদের কোন সমস্যা কথা শুনলেও ছুটে চলেন সেখানে।স্থানীয়রা তাকে বড় কদর করে ডেকে নেন।দীর্ঘ ৭০ বছর ধাত্রীর কাজ এবং নারীদের গোসল করিয়ে পড়তে হয়নি কোন সমস্যায়। এদিকে তার কাছ থেকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকর্মীরা নেন পরামর্শ।

মানব সেবায় নিয়োজিত থাকা ধাত্রী লালমনি বিবি বলেন, আমার বিয়ের পর থেকেই আমি নারীদের ডেলিভারির( ধাত্রী)ও গোসল করানোর কাজ করে আসছি। আল্লাহর রহমতে আজ পর্যন্ত আমি কোন বিপদের মুখে পড়ি নাই। আমার এমনও দিন গেছে ধাত্রীর কাজ করতে আমার এলাকা থেকে অন্য এলাকায় গিয়ে তিনদিন পর্যন্ত থাকতে হয়েছে। ছেলেমেয়েরা তিনদিন পর্যন্ত না খেয়ে রয়েছে। তারপর আমি বাড়িতে এসেছি রান্না করছি তারপর তারা খাইছে।আমার ছেলেমেয়েরা চোখে লজ্জায় কারো কাছে কোন কিছু বলতে পারেনি। আমি এক সময় ভাবছিলাম ছেলেমেয়েদেরকে এভাবে কষ্ট দিয়ে কোন ধাত্রী কাজে যাব না। কিন্তু যখন আমাকে মানুষ ডাকে তখন আমি আর না গিয়ে পারি না। আমার এমন একটা সময় গেছে যে দিনরাত মিলে আমার পাঁচ থেকে ছয়টিও ডেলিভারির কাজ করতে হয়েছে। আমি এলাকার ভিতরে একাই কাজ করেছি। আমার কাজের অনেক চাপ ছিল। এটা আমার এখন এক ধরনের একটা নেশা হয়ে গেছে মানুষের উপকার না করতে পারলে আমার ভালো লাগে না।
আমি নিজের টাকা ব্যয় করে মানুষের সেবা করেছি আমি তাদের কাছ থেকে কোন সময় কোন আর্থিক সহযোগিতা পাইনি বা চাইনি এটা আমার বিবেক কখনো কাজ করেনি। এ পর্যন্ত আমি ৮থেকে ১০ হাজার ধাত্রীর কাজ করেছি। অনেক মৃত্যু নারীদের আমি গোসল করাইছি যা অগণিত। আমি যাদের ধাত্রী সেবা দিয়েছি আজ তারা বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেউ আজ পর্যন্ত আমার কোন খোঁজখবর নেয়নি। আমি চাই সরকার যেন ধাত্রীদের একটা মূল্যায়ন করে।

মাদ্রা এলাকার সাথি বেগম বলেন, ‘আমার পাঁচ সন্তান তার হাতেই হয়েছে। কোনো অপারেশন লাগেনি। এজন্য তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’

পশ্চিম মাদ্রা এলাকার বিলকিস বেগম বলেন, ‘আমার প্রসব ব্যথা উঠলে পরিবারের লোকজন লালমনবিবিকে ডেকে নিয়ে আনে। বিনা অপারেশনে তার হাতেই আমার প্রথম সন্তান হয়।

রাজারচর গ্রামের সেফালী বেগম, কুলপদ্দী গ্রামের আনোয়ারা বেগম, সস্তাল গ্রামের হসলিমা বেগম, বাংলাবাজার গ্রামের আকলিমা বেগম, হোগলপাতিয়া গ্রামের একাধিক নারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ।আমাদের স্বামীরা কৃষি কাজ করে। তাই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার টাকা আমাদের ওইভাবে থাকে না। আমাদের গরিবের ডাক্তার হয়েছে লালমন বিবি। তার সহযোগিতা আমরা মা হয়েছি তিনি সব সময় পাশে থাকে।

তার নাতনি রিফা আক্তার বলেন, আমার নানি যেভাবে মানুষের সেবা করে আমি আজ পর্যন্ত দেখি নাই মানুষ এভাবে মানুষের জন্য সেবা করে। তার যখন বিয়ে হয় বিয়ের পর থেকেই তিনি এই বাচ্চাদের ডেলিভারি সহ মানুষ গোসল করান এবং বাচ্চাদের ঝাড়ফুঁক দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। তার দাদা মারা যাওয়ার পর তাদের ফ্যামিলিটা অনেক অসহায় পড়ছিলেন। সে এত মানুষের সেবা করছে কিন্তু সে কখনো মানুষের সেবা পায়নি। আমরা চাই সরকার যেন তাদেরকে মূল্যায়ন করে।

তার পূতের বউ রিনা বেগম বলেন, আমার শাশুড়ির দায়ের কাজ করেছে।সে কখনো কোনো কিছু পায়নি। নিজে অর্থ দিয়ে ব্যয় করে সেখাবে মানুষের কাছে ছুটে গিয়ে মানুষের সেবা করেছে।

তার এলাকায় ছোট ভাই মোঃ হারেচ হাওলাদার বলেন, আমার জন্মের পর থেকে দেখতেছি আমার বোন এবার করে চলছে।আমার বুবু আজ পর্যন্ত যত নারীদের ডেলিভারি বা ধাত্রী সেবা দিয়েছে আজ পর্যন্ত কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয় নাই। রাত নাই দিন নাই মানুষের ডাকে ছুটে চলে তার মত এরকম নারী আমাদের ওর অনেক কঠিন। ওইভাবে কোন শিক্ষা জ্ঞান না থাকলেও সে সুন্দরভাবে ডেলিভারি করাতে পারে। তিনি নিজের অর্থ ব্যয় করে মানুষের সেবা করে। আমরা চাই সরকার যেন তাদেরকে একটা মূল্যায়ন করে। আমার দুলাভাই মারা গেছে থেকে তিনি আজ পর্যন্ত একটি বিধবা কার্ডও পায়নি। আমরা চাই সরকার যেন তাদের এই সেবামূলক কাজটির মূল্যায়ন করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ
© All rights reserved ©2024 protidinercrime.com