সোহেল রানা রাজশাহী বিভাগীয় ব্যুরো প্রধানঃ-উচ্চ আদালতের নিষেধজ্ঞা অমান্য করে রাজশাহী নগরীর শালাবাগান এলাকায়পুকুর ভরাট করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দুই কর্মকর্তার জন্য কোয়ার্টার নির্মাণ করা হচ্ছে। এর জন্য ব্যয় করা হচ্ছে আড়াই কোটি টাকা। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সেখানে দোতলা ডুপ্লেক্স দুটি বাসভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তবে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদনও নেওয়া হয়নি ওই ভবন নির্মাণের জন্য। এমনকি পুকুর ভরাট করে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্যেও অনুমোদন নেওয়া হয়নি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, অনেকটা গায়ের জোরে সড়ক ও জনপথ অধিপ্তরের রাজশাহী জোনের প্রথম সারির কারখানা ও আবাসিক এলাকার মধ্যে লোকচক্ষুর আড়ালে ওই পুকুরটি গোপনে ভরাট করা হয়েছে। এর পর সেখানে জমির শ্রেণি পরির্তন ছাড়ায় গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসিক দুটি ভবন। এর জন্য পুকুর পাড়ে নারিকেল, কাঁঠাল, আমসহ বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক গাছগুলোও কেটে ফেলা হয়েছে। এসব নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুজন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর জন্য কোয়ার্টার দুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তুভরাটকৃত পুকুরের পাশেই উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীদের জন্য আগে থেকেই সরকারী কোয়ার্টার রয়েছে। কর্মকর্তারা সেখানে না থাকায় অধিকাংশ সময় কোয়ার্টারগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে। ফলে নিয়মে না থাকলেও এসব কোয়ার্টারে একজন গাড়িচালক এবং একজন কর্মচারীর জামাতা থাকেন। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীদের পরিবর্তে তাঁরা এখানে থাকার কারণে প্রতি বছর মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এখন উল্টো দুই কর্মকর্তার জন্য দুটি কোয়ার্টার নির্মাণ করতে ব্যয় করা হচ্ছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শালবাগান এলাকায় সওজের একটি অফিসের পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রয়েছে আবাসিক এলাকা। এর উত্তর পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে মসজিদ, নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসভবন এবং গ্যারেজ। গ্যারেজের উত্তর-পূর্ব কোণে থাকা প্রায় এক বিঘা আয়তনের পুকুরটি মাস দুয়েক আগে গোপনে বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এখন সেখানে কোয়ার্টার নির্মাণের কাজ শুরুহয়েছে। নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা এ কাজ করছেন। একই এলাকার মানিক ও রাসেল নামের দুজন ঠিকাদার এই কাজ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সওজের এক কর্মচারী জানান, কোয়ার্টার দুটি নির্মাণে বিপুল টাকা ব্যয় ধরা করা হচ্ছে। কিন্তু পুকুর ভরাট করে ভবন গড়ে তুলা কাজেজন্য পিলার করা হচ্ছে না। ফলে ভবনটি হবে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অল্প একটু মাটি খুঁড়ে ইট দিয়ে এর দেয়াল তোলা হচ্ছে।
জানতে চাএিল সওজের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হাকিম বলেন, ‘কোয়ার্টার নির্মাণের জন্য আরডিএ থেকে প্ল্যান পাস করানো হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। আবার পুকুর ভরাটের কারণে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়েছে কি না সেটিও বলতে পারব না। তবে মনে হয় অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। আমার আগেই এ কাজের জন্য বরাদ্দ নেওয়া হয়েছিল। এখন সেটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দুটি কোয়ার্টার নির্মাণেই ব্যয় হচ্ছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।’
নগরীর বোয়ালিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন মিয়া বলেন, ‘আইনে পুকুর ভরাট নিষিদ্ধ। সরকারী সংস্থা পুকুর ভরাট করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করলেও জেলা প্রশাসনে আবেদন করতে হবে। এ ধরনের কোন আবেদন সওজ করে থাকলে তদন্তের জন্য আমার কাছে আসতো। আমি কিছু জানি না। নায়েবকে পাঠিয়ে বিষয়টি দেখছি।’
জানতে চাইলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য সওজ কোন প্ল্যান পাস করেছে বলে জানা নাই। তারা পুকুর ভরাট করে কীভাবে ভবন নির্মাণ করছে সেটা খোঁজ নেওয়া হবে। পুকুর ভরাটের কোনো সুযোগই নাই নগরীতে। আবার জমির শ্রেণি পরবির্তনের কোনো সুযোগ নাই।