সফিকুল ইসলাম রানা,চাঁদপুর জেলার স্টাফ রিপোর্টারঃ-মতলব উত্তরে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এর আগে মণ্ডপগুলোতে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ-উৎসব। হিন্দু সধবা নারীরা প্রতিমায় সিঁদুর পরিয়ে দেন, নিজেরা একে অন্যকে সিঁদুর পরিয়ে দেন। চলে মিষ্টিমুখ, ছবি তোলা আর ঢাকের তালে নাচ-গান।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে মোহনপুর সাহা বাড়ি শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দির থেকে বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়।
শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকঢোলের সনাতনী বাজনার সঙ্গে দেবী-বন্দনার গানের মধ্য দিয়ে হাজারো মানুষ এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন।মোহনপুর সাহা বাড়ি শ্রী দূর্গা মন্দির থেকে মোহনপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মেঘনা তীরে গিয়ে শোভাযাত্রা শেষ হয়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, দশভুজা দেবী মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ পৃথিবীতে আসেন। আর দশমার দিন বিসর্জনের মাধ্যমে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয় তাকে। দেবীর আগমন ও প্রস্থানের মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত মাঝের পাঁচদিন নানা আয়োজনে চলে দুর্গোৎসব।
মতলব উত্তরে বিভিন্ন পুজা মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেয় ধানমণ্ডি সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি। এর মাধ্যমে মতলব উত্তর উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদ। বিকেল ৩টার সময় থেকে বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর বিভিন্ন ঘাটে রাত ৮টা পর্যন্ত মতলব উত্তরের ৩৪টি মণ্ডপের প্রতিমা একে একে বিসর্জন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মতলব উত্তর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, আজ বিজয়ী হয়েছেন দুর্গা মা। এজন্য আজ আমাদের আনন্দের দিন। আমরা উৎসব করি। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইজে জানাচ্ছি বিজয়ার শুভেচ্ছা।
মতলব উত্তর উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বাবু রাধেশ্যাম সাহা চান্দু বলেন, যখনি অধর্মের সৃষ্টি হয় এবং অশুভ শক্তির অত্যাচার বেরে যায় তখনি যুগে যুগে, কালে কালে মানুষকে রক্ষার জন্য সত্য ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য শুভ শক্তির উদয় হয়। দেবী দুর্গা অসুর শক্তিকে নিধন করে দেবকুলকে রক্ষা করেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। এদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্পৃতি বজায় রাখতে সম্মিলিত ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিছু সংখ্যক অধার্মীক ও কুচক্রি মহল এই সম্প্রীতিকে নষ্ট করার জন্য এবং দেশের ভাবমূর্তিকে নস্যাৎ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।
ধর্মের অনুশাসনের মধ্য থেকে শান্তি ও সম্পৃতির মধ্য দিয়ে প্রিয় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করার কথা বলেন তিনি। তিনি শারদীয় দুর্গোৎসবকে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ ভাবে পরিচালিত করতে বর্তমান সরকার, রাজনীতিবীদ, সুশীল সমাজ সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এবং দেশবাসীকে শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে সকলের মঙ্গল কামনা করেন।
এদিকে প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা বা দুর্ঘটনা না ঘটে, সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন ও পুলিশ।